বিষয়টা নিয়ে বেশকিছুদিন ধরেই লেখার ইচ্ছে ছিল। আমেরিকাতে আমার গত ১১ মাসের অভিজ্ঞতা থেকে আমার এই লেখাটা। যারা আমেরিকাতে পড়তে আসেন, তাদের সবাইকেই বেশ কিছু প্যারামিটার নিশ্চিত করতে হয়। যেগুলোর মধ্যে LOR, SOP, Resume, TOEFL/IELTS/Dulolingo, GRE, GPA প্রধানতম। আমেরিকাতে এডমিশন ডিসিশন হলিস্টিক নিয়মে হয়। যদি কারো জিপিএ খারাপ হয় কোনো কারণে, সে অন্যান্য প্যারামিটার দিয়ে নিজের একাডেমিক প্রোফাইলের strength বাড়াতে পারবে এবং এর মাধ্যমে চান্সও পেয়ে যেতে পারেন।
যাই হোক, বিভিন্ন প্যারামিটার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই লেখালেখি করেছেন। সেগুলো নিয়ে আমি কিছু বলবোনা। আমি আজ লিখছি ইংলিশ প্রোফিসিয়েন্সি টেস্ট নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে (covid 19 এর পুর্বে) ইংলিশ প্রোফিসিয়েন্সি এর প্রমাণ হিসেবে আমেরিকাতে এডমিশন এপ্লিকেশনের সাথে IELTS বা TOEFL এর স্কোর জমা দিতে হতো; এখনো হয়। তবে, করোনা পরবর্তী সময়ে অনেক ইউনিভার্সিটিতে IELTS/TOEFL এর পাশাপাশি Duolingo Test score এবং Medium of Instructions (MOI) ও গ্রহণ করছে।
IELTS এবং TOEFL নিয়ে সবারই ধারনা আছে। Duolingo এর স্কোর সম্প্রতি নেওয়া শুরু করেছে। এটিও একটি english profficiency test যা বাসায় বসে অনলাইনে দেওয়া যায়, এক্সামের ফি তুলনামূলক কম এবং IELTS/ TOEFL এর চেয়ে তুলনামূলক সহজ পরীক্ষা।
MOI হলো একটা ডকুমেন্ট যা পূর্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদান করা হয় যেখানে একজন ছাত্রের বিস্তারিত তথ্যের পাশাপাশি উল্লেখ থাকে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার মাধ্যম “ইংরেজি”। MOI এর প্রচলন আগে না থাকলেও করোনা পরবর্তী সময়ে অনেক ইউনিভার্সিটি এটি গ্রহণ করা শুরু করেছে আমেরিকাতে এডমিশনের ক্ষেত্রে। MOI এর সুবিধা কি? আমার মতে সুবিধা একটাই, তা হলো IELTS/TOEFL/Duolingo এর মত পরীক্ষা দেওয়া, নির্দিষ্ট স্কোর তোলা, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া এসবের ঝামেলা নেই। আজকাল অনেকেই পরীক্ষার ঝামেলা এড়ানোর জন্য MOI দিয়ে এপ্লিকেশন করছেন আমেরিকাতে। আমাকেও প্রায় সময়েই অনেকে মেসেঞ্জারে নক দেন আমার ইউনিভার্সিটি বা অন্যান্য ইউনিভার্সিটি তে MOI দিয়ে এপ্লাই করা যাবে কিনা জানার জন্য।
প্রশ্ন হল MOI নাকি IELTS/TOEFL/Duolingo? সবগুলোই accepted, কে কোনটা submit করবেন সেটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছে। তবে, আমার গত ১১ মাসের আমেরিকার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যদি MOI এর বদলে IELTS/TOEFL/Duolingo এর স্কোর জমা দেন, আপনি উপকৃত হবেন। কিভাবে? বলছি। তবে আমি আবারও বলে নিচ্ছি যে আমি কাউকে MOI জমা দেওয়াতে নিরুৎসাহিত করছিনা যদি আপনি জমা দিতে চান।
আমেরিকাতে স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে হবে। ক্লাস, এসাইনমেন্ট, লেকচার, সব ইংরেজিতে। যদি আপনার বিদেশি সহপাঠী, বন্ধু হয়, তাদের সাথেও ইংরেজিতেই যোগাযোগ করতে হবে। এজন্য আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। ইংলিশ প্রোফিসিয়েন্সি টেস্টগুলো আপনার সেই দক্ষতার মাপকাঠিই পরিমাপ করে। আপনি লিসেনিং, স্পিকিং, রাইটিং, রিডিং এ কেমন দক্ষ তা যাচাই করা হয়। যেহেতু আমেরিকা পড়তে আসার সাহস করছেন, সেক্ষেত্রে আমি বলবো ইংলিশ প্রোফিশিয়েন্সি টেস্ট দিয়ে এপ্লাই করাটা শ্রেয়। হয়তো আপনি বলতে পারেন আপনি ভালো ইংরেজি পারেন, এস এস সি, এইচ এস সি তে ইংরেজিতে প্লাস ছিল আপনার, ভালো কথা। কিন্তু, আমেরিকান নেটিভ ইংলিশ সম্পর্কে আপনার দক্ষতা কতটুকু তা কিন্তু আপনি জানেননা। আমি TOEFL দিয়েছিলাম, স্কোর মোটামুটি ভালো ছিল। লিসেনিং, স্পিকিং আর রাইটিং এ অনেক ভালো করেছিলাম, তারপরেও আমি খেয়াল করেছি এখানে এসে মাঝে মাঝে আমি নেটিভদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের কথা শুনলে একটু আটকে যাই কখনো কখনো। কয়েকদিন আগে আমার গাড়ির একটা কাজ করানোর জন্য এক আমেরিকান মেকানিককে ডেকেছিলাম, আমার গাড়ি চেক করার পর যখন সে আমাকে তার ফিডব্যাক দিলো, প্রায় সবটাই বুঝলেও একটা সেন্টেন্স বার বার বুঝতে পারছিলাম না, তাকে দুইবার রিপিট করতে বলার পরেও হালকা কনফিউশন থেকে যায়, পরে তাকে বলি আমাকে লিখে দিতে। আমি লিসেনিং এ ভালো করার পরেও এরকম মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়তে হয়। আবার অনেককেই দেখেছি যে ইংরেজি বলতে গেলে জড়তা চলে আসে। সেক্ষেত্রে আপনি MOI দিয়ে এপ্লাই করলে এখানে এসে রিয়েল লাইফে স্পিকিং বা লিসেনিং এ প্রবলেমে পরতে হতে পারে। কেননা আপনাকে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান MOI দিলেও সেখানে তাদের লেখাপড়ার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির কথা উল্লেখ থাকলেও ইংরেজি তে আপনার দক্ষতা কতটুকু তা কিন্তু উল্লেখ থাকেনা। আর অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে রয়েছে, যেগুলোতে অফিসিয়াল মাধ্যম ইংরেজি হলেও দেখা যায় লেকচার দেওয়া, যোগাযোগ সব বাংলাতেই হচ্ছে, কাজেই একজন ছাত্রের ইংরেজির দক্ষতা এভাবে যাচাই করা যায়না।
আমি বলছিনা MOI দেওয়া যাবেনা। অবশ্যই দেওয়া যাবে, তবে সেটার কথা তখনই ভাবলে ভালো যদি আর কোনো উপায় না থাকে বা ডেডলাইন কাছাকাছি চলে এসেছে ফলে টেস্ট দেওয়ার সময় নেই এরকম। তাছাড়া, আমেরিকার সব ইউনিভার্সিটি MOI accept করেনা। ধরা যাক আপনি ১০ টা ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করবেন, ১০ টার মধ্যে ৫ টায় MOI নিলেও বাকি ৫ টায় নিচ্ছেনা, সেক্ষেত্রে আপনার opportunity কিন্তু narrow হয়ে যাবে। অন্যদিকে IELTS/TOEFL/Duolingo কিন্তু প্রায় সব ইউনিভার্সিটিই নিচ্ছে, কাজেই আপনার অনেক অপশন থাকছে সেক্ষেত্রে।
যেহেতু আপনারা আমেরিকাতে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন এবং সাহস নিয়েছেন, আমি বলবো সম্ভব হলে দুই এক মাস প্রস্তুতি নিয়ে IELTS/TOEFL/Duolingo টেস্ট দিয়ে সেই স্কোর সাবমিট করে এপ্লাই করতে। এতে আপনারই উপকার হবে ডেইলি লাইফে। এডমিশন তো একদিনে হবেনা আপনার। এটা বেশ কিছুদিনের একটা প্রক্রিয়া, কাজেই এডমিশনের অন্য প্রসেসগুলো চলাকালীন IELTS/TOEFL/Duolingo টেস্ট দেওয়াটা চ্যালেঞ্জিং কিছু না। IELTS/TOEFL/Duolingo এর ম্যাটেরিয়াল প্র্যাকটিস করতে গেলে লিসেনিং এ নেটিভ স্পিকারদের কথা শুনতে শুনতে আপনার লিসেনিং এ দক্ষতা এসে যাবে আর স্পিকিং সেকশন প্র্যাকটিস করতে করতে স্পিকিং এ দক্ষতা আসবে ও জড়তা অনেকটাই চলে যাবে।
আমার লেখাটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সবাইকে শুভকামনা জানাচ্ছি, বিশেষ করে তাদেরকে যারা আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন